বরই ফুলের খাঁটি মধুর ৬ টি বৈশিষ্ট্য (না জানলে ঠকবেন)

বরই ফুলের খাঁটি মধুর ৬ টি বৈশিষ্ট্য (না জানলে ঠকবেন)

আপনি কি জানেন খাঁটি মধু চেনার সঠিক উপায় কি? খাঁটি মধু চেনার সবচেয়ে সঠিক উপায় হচ্ছে মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা

যদি আপনি মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, তাহলে আপনি ভেজাল মধু থেকে দূরে থাকতে পারবেন এবং খাঁটি মধু চিনে কিনতে পারবেন ইনশাল্লাহ। মধুর বৈশিষ্ট্য বলতে বোঝাচ্ছি- কোন ফুলের মধু কোন এলাকায় উৎপাদন হয়, সেই মধুর রঙ দেখতে কেমন হয়, স্বাদ কেমন হয়, ঘ্রাণ কেমন হয়, ঘনত্ব কেমন হয়, জমে যায় কিনা, ফেনা হয় কিনা ইত্যাদি। এই তথ্য গুলো আপনি যতো বেশি জানতে পারবেন, শিখতে পারবেন, বুঝতে পারবেন, আপনি ততো বেশি খাঁটি মধু চিনতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

আপনি আমার কথা বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমি একজন মৌ-খামারি হিসেবে এবং একজন ৫ বছরের বেশি মধু বিক্রির দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, খাঁটি মধু বা ভেজাল/কৃত্তিম মধু চেনার শর্ট-কার্ট ঘরোয়া কোনো পরীক্ষা নেই। ঘরোয়া পরীক্ষা বলতে বোঝাচ্ছি- আগুন, পানি, চুন, পিঁপড়া, ফ্রিজিং ইত্যাদি পরীক্ষা। আসলে এই পরীক্ষা গুলো দিয়ে খাঁটি বা ভেজাল/কৃত্তিম মধু চেনা সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হতো তাহলে দেশে এতো ভেজাল মধু থাকতো না। কারণ এই ধরনের ঘরোয়া পরীক্ষা কম-বেশি আমরা সবাই জানি।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ফুলের আলাদা আলাদা বৈশিষ্টের মধু উৎপাদন হয়। তার মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত চার প্রকার মধু। চার প্রকার মধু হচ্ছে- সরিষা ফুলের মধু, কালোজিরা ফুলের মধু, লিচু ফুলের মধু এবং সুন্দরবনের মধু। এছাড়াও আরও কিছু ফুলের মধু অল্প পরিমাণে উৎপাদন হয়। আজকে আমি বরই ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। এবং বাদ বাকি মধু নিয়েও আলাদা আলাদা পোস্ট করা হবে ইনশাআল্লাহ।

মুল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আপনাদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানা থাকতে হবে। যদি এই বিষয়টি না জানা থাকে তাহলে এই আর্টিকেল থেকে আসলে উপকৃত হওয়া সম্ভব নই। আর সেটি হচ্ছে, Raw Honey এবং Processing Honey এর মধ্যে পার্থক্যটা জানা।

Raw Honey এবং Processing Honey কাকে বলে?

মৌমাছি যে মধু তৈরি করে মৌচাকে জমা করে, সেই মধুই হচ্ছে কাঁচা মধু বা ‘র হানি’। সেটা গ্রাম গঞ্জের হাতে চাক কাটা মধু হোক বা বাক্সের ভেতরে পোষা মৌমাছি দিয়ে উৎপাদিত মধু হোক। এই দুই প্রকার মৌমাছিই যদি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে, তাহলে এই দুই প্রকার মধুই ভালো মধু, খাঁটি মধু। বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ মধু প্রক্রিয়াজাত মধু বা Processing Honey। কাঁচা মধু এবং প্রক্রিয়াজাত মধু , এই দুই মধুর মধ্যে স্পষ্ট অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রক্রিয়াজাত করা হয় মধু গরম করার মাধ্যমে। আর মধু গরম করলে মধুর অনেক উপকারিতা নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেক সময় ক্ষতিকর হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে ভালো মানের Raw Honey বা কাঁচা মধু খাওয়ার জন্য।

বরই ফুলের প্রাকৃতিক RAW মধুর ৬ টি বৈশিষ্ট্যঃ

বরই ফুলের প্রাকৃতিক RAW মধুর ৬ টি বৈশিষ্ট্যঃ

  • দেখতে সাধারণত Amber রঙের হয়।
  • খেতে খুবই সুস্বাদু। মধু খাওয়ার সময় অনেকটা পাকা বরই এর মতো স্বাদ লাগে।
  • ঘ্রাণ বরই ফুলের মতো লাগে।
  • মধুর ঘনত্ব খুবই পাতলা হবে। আমরা কখনোই বরই ফুলের ঘন মধু পাইনি।
  • বরই ফুলের মধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- একটু ঝাঁকি লাগলেই প্রচুর পরিমাণে ফেনা হয়ে যাবে।
  • সাধারণ তাপমাত্রায় বরই ফুলের খাটি মধু জমতে দেখা যায় না। (এই মধুর অভিজ্ঞতা আমার কম। আমি অন্য অভিজ্ঞদের থেকে যা জানতে পেরেছি, সেটাই এখানে লিখলাম)

বরই ফুলের মধু কখন এবং কিভাবে সংগ্রহ করা হয়?

বাংলাদেশে বরই ফুলের মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত অক্টোবর মাসে। বড় বড় বরই বাগানে যখন প্রচুর পরিমাণে বরই ফুল ফুটতে শুরু করে, তখন মৌ চাষিরা তাদের মৌ বাক্স গুলো বরই বাগানের মধ্যে স্থাপন করে। তারপর ফুল বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথেই মৌমাছিরা ওই এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করে তাদের মৌ বাক্সে জমা রাখে। এভাবেই তৈরি হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বরই ফুলের খাঁটি মধু।

বরই ফুলের RAW মধু তে কেন ফেনা হয়

বরই ফুলের RAW মধু তে কেন ফেনা হয়?

বরই ফুলের প্রাকৃতিক Raw মধুতে সব সময়ই ঝাঁকি লাগলে ফেনা হতে দেখা যায় ও সম্পূর্ণ মধু সাদা রঙের হয়ে যেতে পারে। যা দেখে একজন সাধারণ মধু ক্রেতা, মধু খাঁটি হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন। কিন্তু এই সন্দেহ টি একেবারেই সঠিক নয়। নিচে তার Scientific ব্যাখ্যা দেওয়া হলঃ

বরই ফুলের প্রাকৃতিক Raw মধুতে অ্যাক্টিভ এনজাইম, প্রোটিন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। এবং মধু একটি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় পদার্থ যাতে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকে। আর গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ- কার্বন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত। এ জন্য বরই ফুলের প্রাকৃতিক Raw মধুতে যেহেতু সব সময়ই ময়েশ্চারের পরিমাণ বেশি থাকে, অর্থাৎ মধুর ঘনত্ব খুবই কম হয় বা মধু পাতলা হয়। যার ফলে মধু একটু ঝাঁকি লাগলে বা পাকেজিং করার সময় মধুর মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি করে। এতে মধুর মধ্যে বায়ু বুদবুদ সৃষ্টি হয় এবং একই সাথে মধু ফেনা হয়ে সাদা হয়ে যায় ও পাত্রের ভেতরে গ্যাস হয়ে যায়, তাই প্ল্যাস্টিক এর বোতল কিছুটা ফুলে যেতে দেখা যায়। মধুতে ফেনা তৈরি হলে সেটাকে কিছুক্ষণ স্থিরভাবে একই যায়গায় রেখে দিলে আবার সেই ফেনা মধুতে পরিণত হবে। এতে মধুতে কোন প্রকার ক্ষতি বা সমস্যা হবে না।

উপসংহার

যতটা সম্ভব খুব সহজে মুল বিষয়গুলো বোঝানর চেষ্টা করেছি। তারপরও একবার পড়ে বুঝতে অসুবিধা হলে দুই তিন বার পড়তে পারেন। তাহলে আরও ভালমতো বুজতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

আমি মনে করি, এই ব্লগ পোস্টে দেওয়া তথ্য গুলো যদি কোনো মধু ক্রেতা ভালোভাবে আয়াত্ত করতে পারে। তাহলে আর কোনো ভেজাল ব্যবসায়ী অথবা প্রতারক, তাকে বরই ফুলের খাঁটি মধু বলে ভেজাল বা কৃত্তিম মধু দিতে পারবে না ইনশাআল্লাহ

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার জ্ঞানে যা ছিলো তাই আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছি। অবিজ্ঞ জনেরা যদি আমার এই কনটেন্ট এর মধ্যে কোনো ভুল খুঁজে পান তাহলে অবশ্যই জানাবেন দয়া করে। আপনার ছাত্র হতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো।

যোগাযোগ

আমার ফেসবুক প্রোফাইলে অথবা ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করতে পারেন।

Name: Al-Amin Hossain
Owner: KhatiModhu.com
Admin: মৌমাছি ও মধু গ্রুপ

WhatsApp: 01869-663242
E-mail: info@khatimodhu.com
Address: Kaliganj, Jhenaidah, Bangladesh.

Learn more:  Youtube Channel | Blog BUY HONEY

Leave a Reply